আন্তর্জাতিক

সৌরজগতের শেষ সীমানা কোথায়

সৌরজগৎ
সৌরজগৎছবি: পেক্সেলস

বিভিন্ন দেশের শেষ সীমানা রয়েছে। আমাদের সৌরজগতের শেষ সীমানা কোথায়, তা আমরা অনেকেই জানি না। সৌরজগতের শেষ সীমানা নির্ধারণ করা মোটেও সহজ কাজ নয়। আসলে সৌরজগতের কোনো সুস্পষ্ট প্রাচীর নেই, যা নির্দেশ করে সৌরজগৎ সেখানেই শেষ। তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য সৌরজগতের শেষ সীমা হিসেবে বেশ কিছু বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা।

ঐতিহাসিকভাবে সৌরজগতের শেষ সীমানা ধরা হয় নেপচুন গ্রহের কক্ষপথকে। সূর্য থেকে প্রায় ৩০ জ্যোতির্বিদ্যা একক (এইউ) দূরে অবস্থিত নেপচুন গ্রহের কক্ষপথ। এর পরেই কুইপার বেল্ট শুরু হয়। নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে ৩০ থেকে ৫৫ এআই পর্যন্ত বিস্তৃত বরফ ও পাথরের ছোট ছোট বস্তুর একটি চাকতি কুইপার বেল্ট। প্লুটো ও অন্যান্য বামন গ্রহ যেমন হাউমিয়া ও মেকমেক এই অঞ্চলে অবস্থান করছে। অনেক স্বল্প পর্যায়ের ধূমকেতুর বাস এই কুইপার বেল্ট। বিজ্ঞানীদের অনেকেই মনে করেন, এখানেই সৌরজগতের মূল অংশ শেষ হয়েছে।

কুইপার বেল্টের পরের এলাকাকে হেলিয়োপজ বলে। সূর্যের প্রভাব কুইপার বেল্ট থেকে আরও বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। সূর্য ক্রমাগত চার্জিত কণা, যাকে সৌরবায়ু বলে চারদিকে বিকিরণ করে, যা হেলিয়োস্ফিয়ার নামের একটি বিশাল বুদ্‌বুদের মতো অঞ্চল তৈরি করেছে। এটি সূর্য থেকে প্রায় ১২০ এইউ দূরে অবস্থিত। এই এলাকা সৌরজগতের চুম্বকীয় প্রভাবের শেষ সীমা হিসেবে বিবেচিত হয়। ভয়েজার–১ ও ভয়েজার–২ মহাকাশযান এই সীমা অতিক্রম করে আন্তনাক্ষত্রিক স্থানে প্রবেশ করেছে। হেলিয়োপজের ভেতরের অঞ্চল যেখানে সৌরবায়ু ধীর ও উত্তপ্ত হয়, তাকে হেলিয়োশিথ বলা হয়। এর ভেতরের দিকে রয়েছে টার্মিনেশন শক। যেখানে সৌরবায়ু সুপারসনিক গতি থেকে সাবসনিক গতিতে ধীর হতে শুরু করে।

সৌরজগতের একেবারে বাইরের দিকে এক বিশাল গোলাকার মেঘের মতো অঞ্চল রয়েছে, যা ওর্ট মেঘ নামে পরিচিত। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এলাকাটি সূর্য থেকে প্রায় দুই হাজার থেকে দুই লাখ এইউ পর্যন্ত বিস্তৃত। সূর্যের মহাকর্ষীয় প্রভাব এখানে বেশ দুর্বল। নিকটবর্তী নক্ষত্রের মহাকর্ষীয় টানে এখানকার অনেক বস্তুর কক্ষপথ পরিবর্তিত হতে পারে। ওর্ট মেঘকে সৌরজগতের সর্বশেষ মহাকর্ষীয় সীমানা হিসেবে গণ্য করা হয়। এখানকার বস্তু সূর্যের দুর্বল বন্ধন ছেড়ে আন্তনাক্ষত্রিক স্থানে চলে যেতে পারে। কোনো মহাকাশযান যদি আলোর গতিতে ভ্রমণ করে তাহলে হেলিয়োপজে পৌঁছাতে প্রায় ১৭ ঘণ্টা লাগবে। আর ওর্ট মেঘের ভেতরের প্রান্তে পৌঁছাতে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। ওর্ট মেঘের বাইরের প্রান্তে পৌঁছাতে কয়েক হাজার বছর লেগে যাবে।

সূত্র: নাসা

সৌরজগতের শেষ সীমানা ঠিক কোথায়—এই প্রশ্নের জবাব খুব সহজ নয়, কারণ “শেষ” বলতে আমরা কী বোঝাতে চাই, তার ওপর নির্ভর করে উত্তর। বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের শেষ সীমানা নির্ধারণ করতে কয়েকটি আলাদা আলাদা সীমা বা অঞ্চল বিবেচনা করেন:


🌞 ১. হেলিওপজ (Heliopause) – সৌরজগতের “প্রযুক্তিগত” শেষ

  • এটি এমন এক সীমানা, যেখানে সূর্যের প্রভাবে তৈরি হওয়া সৌর বায়ু (solar wind) আর ছড়াতে পারে না; কারণ আন্তঃনাক্ষত্রিক মধ্যম (interstellar medium)-এর চাপ সেখানে বেশি।
  • এই অঞ্চলকে বলা হয় সৌরজগতের প্রকৃত শেষ
  • দূরত্ব: প্রায় ১৮ বিলিয়ন কিলোমিটার বা ১২০-১৫০ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট (AU) দূরে সূর্য থেকে।
  • ভয়েজার ১ (Voyager 1) ২০১২ সালে হেলিওপজ পেরিয়ে গেছে—এটাই মানুষের তৈরি প্রথম যন্ত্র, যা সৌরজগতের বাইরের দিকে প্রবেশ করেছে।

🌠 ২. ওর্ট মেঘ (Oort Cloud) – সৌরযন্ত্রের “মহাজাগতিক সীমা”

  • এটি একটি কাল্পনিক গোলাকার মেঘ, যেখান থেকে অনেক ধূমকেতু সৌরজগতে প্রবেশ করে।
  • এটি হেলিওপজ থেকেও অনেক অনেক দূরে।
  • দূরত্ব: প্রায় ২,০০০ থেকে ১,০০,০০০ AU পর্যন্ত প্রসারিত।
  • এই অঞ্চল এখনো সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি, তবে মহাকর্ষীয় প্রভাব ও ধূমকেতুর গতিপথ বিশ্লেষণ করে এর অস্তিত্ব অনুমান করা হয়।

🪐 ৩. কুইপার বেল্ট (Kuiper Belt) – গ্রহপথের পরের এলাকা

  • এটি সৌরজগতের একটি বিস্তৃত অঞ্চল, যেখানে অনেক বরফঢাকা বস্তু ও বামন গ্রহ (যেমন: প্লুটো) আছে।
  • দূরত্ব: প্রায় ৩০ থেকে ৫০ AU পর্যন্ত।
  • এটি সৌরজগতের “আধা-বাইরের” অঞ্চল হিসেবে ধরা হয়।

🎯 তাহলে, সৌরজগতের শেষ কোথায়?

সংক্ষেপে বললে:

  • যদি সূর্যের প্রভাব (যেমন সৌর বায়ু) যেখানে শেষ হয়, সেটাই “শেষ” মনে করেন — হেলিওপজ
  • যদি সৌরযন্ত্রের সব মহাকর্ষীয় প্রভাব ধরে শেষ বোঝেন — ওর্ট মেঘ

চমকপ্রদ তথ্য:
ভয়েজার ১ ও ২ মহাকাশযান এখন সৌরজগতের সীমার বাইরে ইন্টারস্টেলার (নাক্ষত্রিক) অঞ্চলে অবস্থান করছে, তবে এখনো সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ তাদের প্রভাবিত করে।


 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button