বাংলাদেশ

চট্টগ্রামে ৫ পশুর হাটের ৪টিই বিএনপির হাতে

চট্টগ্রাম নগরের একটি পশুর হাট

 

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এবারের কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ইজারা দেওয়া পাঁচটি অস্থায়ী পশুর হাটের চারটিই পেয়েছেন বিএনপির সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন যুবদল, কৃষক দল ও মৎস্যজীবী দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এবার অস্থায়ী পশুর হাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। তবে সব হাটের দরপত্র আহ্বান এবং চূড়ান্ত ইজারার পর রাজস্ব আদায় দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। গত বছর সাতটি হাট থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৫ কোটি ৬ লাখ টাকা। সেই হিসাবে আয় কমেছে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

সাধারণত বিগত তিন বছরের ইজারা মূল্যের গড়ের সঙ্গে ৬ শতাংশ হারে বাড়তি মূল্য সংযোজন করে হাটের দর নির্ধারণ করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু এবার বেশির ভাগ হাটেই নির্ধারিত দরের চেয়ে কম দর পড়েছে।

হাট ইজারা পেলেন কারা

নগরের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডে সিডিএ বালুর মাঠ হাটটির ইজারা পেয়েছেন বন্দর থানা যুবদলের সাবেক সদস্যসচিব মো. নিজাম উদ্দিন। তিনি সর্বোচ্চ ১ কোটি ৩০ লাখ ১১১ টাকা দর দিয়েছেন। গতবার একই হাটের ইজারা হয়েছিল ২ কোটি ২২ লাখ টাকায়।

মো. নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে এই হাট নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁদের হাতে বড় অঙ্কের টাকা থাকায় উচ্চ দামে ইজারা নিয়েছিলেন। আমাদের তেমন অর্থ না থাকলেও নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দিয়েই ইজারা নিয়েছি।’

৪০ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদপাড়ার টিএসপি মাঠের হাটটি পেয়েছেন মৎস্যজীবী দলের পতেঙ্গা থানার আহ্বায়ক মো. সালাউদ্দিন। নির্ধারিত দর ছিল ১৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, তবে সর্বোচ্চ দর উঠেছে মাত্র ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।

নতুন হাট হিসেবে যুক্ত হওয়া ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের চরপাড়া আলমগীর সাহেবের মাঠের ইজারা পেয়েছেন কৃষক দলের নগর আহ্বায়ক মো. আলমগীর। ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা দর দিয়ে তিনি হাটটি পেয়েছেন। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুনিরনগর আনন্দ বাজারসংলগ্ন হাটের ইজারা পেয়েছেন যুবদলের কর্মী খুরশীদ আলম।

এ ছাড়া নগরের সবচেয়ে বড় অস্থায়ী পশুর হাট কর্ণফুলী পশুর বাজারের ইজারা পেয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। তিনি জানান, ১৮ বছর ধরে এ হাটটি তিনি ও তাঁর ভাই ইজারা নিয়ে আসছেন। এবার হাটটির নির্ধারিত দর ছিল ২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। তবে তিনি দর দিয়েছেন ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। খোরশেদ আলম বলেন, ‘আগের তুলনায় হাটের আয়তন কমে গেছে। পাশাপাশি নগরের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে হাট বসে। এতে বৈধ হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতা কম আসে, ফলে আয় কমে গেছে।’

রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন

১৭ মে নগরের টাইগারপাসে নগর ভবনের বাইরে আউটার রিং রোডের সিডিএ বালুর মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপি ও যুবদলের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ হাটটি ইজারা পেয়েছেন বন্দর থানা যুবদলের সাবেক সদস্যসচিব মো. নিজাম উদ্দিন।

সিটি করপোরেশনের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, নিয়ম অনুযায়ীই ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে এবার প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়নি। সময় স্বল্পতার কারণে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব হয়নি।’ কামরুল ইসলাম আরও জানান, তিনটি হাটে ইজারাদার পাওয়া না যাওয়ায় এবং অস্বাভাবিক কম দর পড়ায় সিটি করপোরেশন সেগুলো নিজেরাই পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবারই প্রথম নগরে কোরবানির পশুর হাট বসছে। সেই প্রেক্ষাপটে হাট ইজারার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে বলে স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনা চলছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তদান ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিদায়ের পর মানুষের মধ্যে যে গণ-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, সে প্রত্যাশা ও আশা পূরণ হয়নি। আগের সরকারের সময় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে হাটবাজারগুলো যেভাবে নিয়ন্ত্রণ নিত, এখনো সেই একই পদ্ধতিতে তা নেওয়া হচ্ছে। শুধু সুবিধাভোগীদের চেহারা পরিবর্তন হয়েছে। এটি দুর্ভাগ্যজনক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button