খেলা

এমবাপ্পের হ্যাটট্রিক ম্লান করে শিরোপার খুব কাছে বার্সেলোনা !

লিওনেল মেসি-ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোদের বিদায়ের পর কিছুটা জৌলুস হারিয়েছিল ‘এল ক্ল্যাসিকো’। এবারের মৌসুমে সেই হারানো জৌলুস ফিরে পেয়েছে ফুটবলের ধ্রুপদী লড়াইটি।

৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে এবারের মৌসুমের সব কটি ‘এল ক্ল্যাসিকোয়’ জয় পেয়েছে বার্সা।

 

লিওনেল মেসি-ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোদের বিদায়ের পর কিছুটা জৌলুস হারিয়েছিল ‘এল ক্ল্যাসিকো’। এবারের মৌসুমে সেই হারানো জৌলুস ফিরে পেয়েছে ফুটবলের ধ্রুপদী লড়াইটি। যেন বলে গেল, কারো জন্য কোনো কিছু থেমে থাকেন না।

মৌসুমের শেষ ‘এল ক্ল্যাসিকোয়’ আজ তেমনি টান টান রোমাঞ্চের দেখা মিলেছে। যেমনটা নিজেদের সময় শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ উপহার দিয়েছিলেন মেসি-রোনালদোরা। রোমাঞ্চকর ম্যাচের শেষ হাসিটা অবশ্য বার্সেলোনাই হেসেছে। ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে এবারের মৌসুমের সব কটি ‘এল ক্ল্যাসিকোয়’ জয় পেয়েছে বার্সা। অথচ, এবারের মৌসুমের সর্বশেষ তিন ‘এল ক্ল্যাসিকোয়’ হারা রিয়াল ম্যাচের শুরুটা করেছিল দুর্দান্তভাবে।

ম্যাচের বয়স ৫ মিনিট পার না হতেই গোলের দেখা পায় তারা। তৃতীয় মিনিটের সময় কিলিয়ান এমবাপ্পেকে বক্সের মধ্যে ফাউল করেন বার্সেলোনার গোলরক্ষক ভয়েচেক সেজনি। তাতে সফল স্পটকিক নিয়ে এস্তাদিও অলিম্পিক লুইস কম্পানিসে খেলা দেখতে আসা বার্সার দর্শকদের স্তব্ধ করে দেন এমবাপ্পে। ঘরের মাঠে শুরুতেই গোল হজম করে ম্যাচে ফেরার সুযোগ পেয়েছিল বার্সেলোনাও।

তবে ৮ মিনিটে এরিক গার্সিয়ার শট সেভ করে বার্সাকে হতাশ করেন রিয়ালের গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। ৬ মিনিট পর বার্সার হতাশা আরও বাড়ান এমবাপ্পে। বাঁ প্রান্ত থেকে ১৪ মিনিটে ফরাসি স্ট্রাইকারকে অবিশ্বাস্য এক পাস দেন ভিনিসিয়ুস। তা থেকে বার্সেলোনার গোলরক্ষককে সহজেই পরাস্ত করেন এমবাপ্পে।

 

দুই গোলে পিছিয়ে থাকা বার্সেলোনা এরপর একের পর এক আক্রমণ শুরু করতে থাকে। তার সুফলও পায়। ১৭ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ইয়ামালের শট সেভ করে গোলবারের নিচে দাঁড়ানো শেষ হতে না হতেই ১৮ মিনিটে  দূরপাল্লার এক শটের মুখোমুখি পড়তে হয় কোর্তোয়া। জেরাড মার্টিনের নেওয়া দ্রুতগতির শটটা কোনো রকমে কর্নারের মাধ্যমে প্রতিহত করলেও এরিক গার্সিয়ার হেড থামানোর সুযোগ পাননি রিয়াল গোলরক্ষক।

২৪ মিনিটে ব্যবধান কমিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেয় কোচ হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা। সেই ধারাবাহিকতায় ৩২ মিনিটে সমতায়েও ফেরে বার্সা। রিয়ালের বক্স থেকে ধনুকের মতো বাকানো শটে গোলটি করেন ইয়ামাল। গোলে সহায়তা করেন ফেরান তোরেস।

দুই মিনিট পরেই এবার রিয়ালকে স্তব্ধ করে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। গোলের নায়ক রাফিনিয়া। রিয়ালের দুই খেলোয়াড় এমবাপ্পে-দানি সেবায়সের ভুল-বোঝাবুঝিতে বল পেয়ে মাঝমাঠ থেকে অ্যাসিস্ট করেন পেদ্রি। ৩৭ মিনিটে রিয়ালের বক্সে দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন পাও কুবারসি। তবে যে শটটি নিলেন তা বারের অনেক ওপর দিয়ে চলে যায়। ৪২ মিনিট দারুণ এক ক্রস করেছিলেন ইয়ামাল। হেডটা ঠিকমতো পোস্টে রাখতে পারলেই দ্বিতীয় গোল পেতে পারতেন রাফিনিয়া।

অন্যদিকে ফিরতি মিনিটে আরেকটি পেনাল্টি পেয়েছিল রিয়াল। নিজেদের বক্সে ফ্রেংকি ডি ইয়ং এমবাপ্পেকে ফাউল করেছেন কি না তা ভিএআরে চেক করার আগেই অফসাইড ধরা পড়লে রেফারির সিদ্ধান্ত বদলে যায়। উল্টো বিরতিতে যাওয়া ঠিক আগমুহূর্তে ব্যবধান ৪-২ করেন রাফিনিয়া। সতীর্থর পাস ঠিকমতো রিয়ালের অধিনায়ক লুকাস ভাসকেস ধরতে না পারলে বল কেড়ে নেন রাফিনিয়া। পরে সতীর্থ ফেরান তোরেসকে দেন তিনি। পরে সতীর্থর ফিরতি পাস বক্সে পেয়ে জালে জড়াতে ভুল করেননি রাফিনিয়া।

প্রথমার্থের যোগ করা সময়ে প্রায় হ্যাটট্রিক পেয়েই গিয়েছিলেন এমবাপ্পে। তবে বল জালে জড়ানোর আগে অফসাইডের ফাঁদে পড়েন রিয়াল স্ট্রাইকার। বিরতি শেষে মাঠে নেমেই ব্যবধান কমানোর সুযোগ পায় রিয়াল। কিন্তু ৪৭ মিনিটের সময় ভিনিসিয়ুসের স্পর্শটা দ্রুতগতির হওয়ায় বল চলে যায় বার্সার গোলরক্ষক সেজনির হাতে। অন্যদিকে ৫২ মিনিটে রিয়ালের জালে বল জড়ানোর আগে যদি তার সতীর্থ রাফিনিয়া অফসাইড না হতেন তাহলে ম্যাচে দ্বিতীয় গোল পেতে পারতেন ইয়ামাল।

৫৬ মিনিটে দ্বিতীয়বার হ্যাটট্রিক করার দুর্দান্ত সুযোগ পেয়েছিলেন এমবাপ্পে। ভিনিসিয়ুসের রক্ষণচেরা পাসে শটটিও নিয়েছিলেন তিনি। তবে অল্পের জন্য দূরের পোস্ট দিয়ে বাইরে চলে যায় বল।

সে যাত্রায় হতাশ হলেও ৭০ মিনিটে ঠিকই হ্যাটট্রিক পেয়েছেন এমবাপ্পে। বক্সের মধ্যে ভিনিসিয়ুসের সহজ পাস ফাঁকা পোস্টে জালে জড়াতে ভুল করেননি তিনি। রিয়ালের হয়ে তৃতীয় হ্যাটট্রিক করার পথে একটা রেকর্ডও গড়েছেন এমবাপ্পে। রিয়ালের হয়ে অভিষেক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৩৯ গোলের রের্কড় গড়েছেন। আগের রেকর্ডটি ছিল চিলির সাবেক ফরোয়ার্ড ইভান জামোরানোর ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে।

৭৪ মিনিটে মুখে তুলে দেওয়া এক গোল মিস করেছেন রাফিনিয়া। বাঁ প্রান্ত থেকে দারুণ এক ক্রস করেন ইয়ামাল। বাঁ পায়ের নিশানাটা ঠিকমতো জালে রাখতে পারলেই এমবাপ্পের মতো হ্যাটট্রিক পেতে পারতেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। তবে ওপর দিয়ে মারায় তা আর হয়নি।

এরপর দুই দলই আরও কিছু আক্রমণ করলেও কেউ জালের দেখা পায়নি। তবে ৮৯ মিনিটে রিয়ালের বদলি খেলোয়াড় ভিক্টর মুনোজ যে মিসটা করলেন তার কোনো ব্যাখ্যাই হয়না। বার্সার গোলরক্ষককে একা পেয়েই অবিশ্বাস্যভাবে ডান পায়ের শটটা বাইরে নিলেন এই ফরোয়ার্ড। যোগ করা সময়ে রিয়ালকে সমতায় ফেরানোর দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন এমবাপ্পে। তবে যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে এমবাপ্পের ডান পায়ের শটকে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্ষিপ্রতায় প্রতিহত করেন সেজনি।

পরে অবশ্য কর্নার থেকে গোল দিয়েছিলেন এমবাপ্পে। তবে বল জালে জড়ানোর আগে অফসাইডের ফাঁদে পড়েছিলেন। ৯৬ মিনিটে অবশ্য দুর্দান্ত শটে ৫-৩ ব্যবধান করেছিলেন ফেরমিন লোপেজ। তবে গোল করার আগে তার হাতে বল লাগায় তা বাতিল হয়ে যায়। আর শেষ মুহূর্তে হ্যাটট্রিকের সহজ সুযোগ মিস করেছেন রাফিনিয়া। গোলবার ফাঁকা পেয়েও চিপ করে জালে জড়াতে পারেননি তিনি। হ্যাটট্রিক না পাওয়ার আক্ষেপ থাকলেও ৪-৩ ব্যবধানে জয় পাওয়ার পর নিশ্চয়ই সেই হতাশা দ্রুত মিইয়ে গেছে বাতাসে।

এ জয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে হাত ছোঁয়া দূরত্বে বার্সেলোনা। ৮২ পয়েন্ট শীর্ষে থাকা বার্সাকে শেষ তিন ম্যাচে একটি জয় পেলেই হবে। কেননা রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে ৭ পয়েন্টে এগিয়ে কাতালানরা। সমান ৩৫ ম্যাচে ৭৫ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button