বাংলাদেশ

সচিবালয়ে কর্মচারীদের মহাসমাবেশ স্থগিত

পদোন্নতি, বেতন বৈষম্যসহ নয় দফা দাবিতে সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের আগামী ৪ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ স্থগিত করেছে কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ।

রোববার (১ ডিসেম্বর) সচিবালয় ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের’ নেতাদের সঙ্গে জনপ্রশাসন সচিব, ভূমি সচিব ও জনপ্রশাসনের এপিডির সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্ত জানান তারা।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, সচিবালয়ে ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক কর্মচারী আছেন দুই হাজারের ওপরে। দীর্ঘদিন তারা বেতন ও পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন। এখন তাদের নয় দফা যে দাবি সেগুলো কোনোটাই অযৌক্তিক নয়। এসব দাবি পূরণ করা সম্ভব। তবে সময় সাপেক্ষ। কিছু দাবি তাৎক্ষণিকভাবে পূরণ করা গেলেও কয়েকটি রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি। সেসব দাবির সঙ্গে আইন, ভূমি ও অর্থ মন্ত্রণালয় জড়িত।

ভূমি সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ ও এপিডি বলেন, সচিবালয়ের কর্মচারীদের এসব দাবি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। ধাপে ধাপে তাদের এসব দাবি পূরণ করা হবে। আইনি কিছু জটিলতা রয়েছে, যা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বাদিউল কবির বলেন, সচিবালয়ে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেই বিষয়টি আমাদের জনপ্রশাসন সচিব, ভূমি সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বসে আমাদের দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করে নিয়েছেন। দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে বাস্তবায়ন করা হবে। তাই আমরা মহাসমাবেশ স্থগিত ঘোষণা করেছি।

এর আগে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ সর্বদা তাদের নেতৃত্ব নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। যারা সর্বদা বস্তুনিষ্ঠ ও যৌক্তিক বিষয় বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি-দাওয়া পেশ করে থাকে। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও প্রাপ্যতা বিবেচনায় করা নয় দফা দাবি জানান।

প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা পদোন্নতি, বেতন বৈষম্যেসহ নয় দফা দাবিতে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুদিন আন্দোলন করে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। এরপর সংগঠনটির সভাপতি মো. বাদিউল কবীর দাবি পূরণ না হলে আগামী ৪ ডিসেম্বর মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন।

দাবিগুলো হলো- পতিত স্বৈরাচারের আমলে চাকরি থেকে অন্যায়ভাবে সাময়িক বরখাস্ত, বরখাস্ত ও বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানকারী কর্মচারীদের স্বল্প সময়ের মধ্যে চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগে চিঠি জারি করা। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্য থেকে যারা ইতোমধ্যে নিয়মিত সরকারি চাকরিকাল অতিক্রম করেছেন তাদের ভূতাপেক্ষ জ্যৈষ্ঠতা দেওয়াসহ নিয়মিত চাকরির মতো ভূতাপেক্ষভাবে আর্থিক সুবিধাদি দেওয়ার নির্দেশনা দেন।

বিদ্যমান অস্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা তাদের নির্ধারিত স্বল্প বেতন দিয়ে সংগতিপূর্ণ জীবনযাপনে অপারগ হয়ে অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও দুর্বিষহ দিনাতিপাত করছেন। সে কারণে অনতিবিলম্বে কর্মচারী প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় পে-কমিশন গঠন এবং বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে বিদ্যমান ২০টি গ্রেডের পরিবর্তে ১০টি বেতন গ্রেড নির্ধারণ করা। পূর্ণাঙ্গ পে-কমিশন বাস্তবায়নের আগে সব স্তরের কর্মচারীদের জন্য (১ থেকে ২০ গ্রেড পর্যন্ত) ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং পরবর্তী পে-কমিশন চূড়ান্ত বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান ২০টি গ্রেডের মধ্যে ২০তম গ্রেডে (অফিস সহায়ক) কর্মরতদের বেতন গ্রেড ১৭তম গ্রেডে ও ১৭তম গ্রেড (ক্যাশ সরকার) ১৫তম গ্রেডে, সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গ্রেড-১০ হতে গ্রেড-৯, হিসাব রক্ষক গ্রেড-১২ থেকে উপ-সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গ্রেড-১০, ক্যাশিয়ার গ্রেড-১৪ থেকে গ্রেড-১২ ও ফটোকপি মেশিন অপারেটর/ডিএমও গ্রেড-১৮ থেকে গ্রেড-১৬-তে উন্নীত করা (সংযুক্তি-ক)।

আগের মতো ১০০ শতাংশ পেনশন ও গ্র্যাচুইটির হার ৪০০ টাকা বাড়াতে হবে। সব স্তরের কর্মচারীদের জন্য আগের মতো টাইম-স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড চালু করা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বার্ষিক আয়সীমা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়করমুক্ত রাখা। সচিবালয় কর্মচারীদের জন্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের মতো সচিবালয় ভাতা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো রেশনিং প্রথা চালু করা। যেহেতু দেশের মানুষের গড় আয় বেড়েছে এবং সরকারি কর্মচারীরা আগের চেয়ে দীর্ঘদিন কর্ম সম্পাদনে সক্ষম, সেহেতু চাকরি থেকে অবসরের বিদ্যমান ৫৯ বছরের বয়স বা সময়সীমা আরও তিন বছর বর্ধিত করে ৬২ বছর নির্ধারণ করা।

এছাড়া ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীদের পদনাম পরিবর্তিত হয়ে নতুন পদনাম হয়েছে সে পরিপ্রেক্ষিতে সচিবালয় কর্মচারীদের কর্মস্থলের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ পদনাম হওয়া আবশ্যক বিধায় নতুন পদনাম করণের প্রস্তাব করা হলো (সংযুক্তি-খ)। সচিবালয় কর্মচারীদের বিদ্যমান পদনাম পরিবর্তন করে প্রস্তাবিত পদনাম অনুযায়ী আদেশ জারি করা। বাংলাদেশ সচিবালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির বিদ্যমান পদসমূহ পরিবর্তন করে প্রস্তাবিত পদে পদনাম পরিবর্তন (সংযুক্তি-গ)।

পদোন্নতির ক্ষেত্রে চরমভাবে বঞ্চিত বাংলাদেশ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায্য প্রাপ্যতানুযায়ী সংযুক্ত সার-সংক্ষেপে (সংযুক্তি-ঘ) বর্ণিত পদসমূহ সংখ্যানুপাতে সংরক্ষণের আদেশ জারীর নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া এবং কর্মচারীদের দাবিসমূহ বাস্তবায়নের জন্য গঠিত পর্যালোচনা কমিটিতে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একজন প্রতিনিধি অথবা তাদের পক্ষ থেকে মনোনীত একজন প্রতিনিধির অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা। এতদ ব্যতীত সব স্তরের কর্মচারীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণের জন্য বিদ্যমান নিয়োগ বিধিতে বর্ণিত পদোন্নতির মেয়াদ পূর্তিতে স্বয়ংক্রিয় পদোন্নতির বিধান অন্তর্ভুক্ত করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button