রাজপথের কর্মসূচিতে বিএনপি
♦ মামলা প্রত্যাহার ♦ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ♦ গুরুত্ব পাবে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা ♦ তুলে ধরা হবে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতা-কর্মীদের মামলা দ্রুত প্রত্যাহার, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ নানান দাবিতে রাজপথের কর্মসূচিতে যাচ্ছে রাজপথের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। পাশাপাশি এসব কর্মসূচি থেকে রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবও তুলে ধরা হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দলটির স্থায়ী কমিটির সভায় এসব বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমরা তো মাঠেই আছি। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে ভোটের জন্য অপেক্ষা করছে দেশবাসী। সেই নির্বাচন যাতে দ্রুত হয় সে দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরতে চাই। দেশজুড়ে এসব কর্মসূচি কখন, কোথায় হবে সে সিদ্ধান্ত শিগগিরই জানতে পারবেন।’ জানা যায়, ‘যৌক্তিক’ সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি করে আসা বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা এ বিষয়ে আর বেশি দিন ধৈর্য না ধরার চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন। চলতি নভেম্বর মাসজুড়ে রাজধানী ঢাকাসহ জেলা ও মহানগরে নতুন করে গণসংযোগ ও সমাবেশের কর্মসূচি পালন করবে দলটি। নতুন ইংরেজি বছরের শুরু থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইবেন। সেটি না হলে মার্চ-এপ্রিলের দিকে নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চান দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা। বিএনপির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন, সভাসমাবেশ থেকে নির্বাচনের রোডম্যাপ, মামলা প্রত্যাহার, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে পরিচিত সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে থাকা কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবিও তুলবেন নেতারা। এরই অংশ হিসেবে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে শুক্রবার ঢাকায় র্যালিতে বিশাল শোডাউন করে বিএনপি।
র্যালিতে আসা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের আহ্বায়ক সুমন ভূইয়া, সদস্যসচিব বদরুল আলম সবুজ, ঢাকা মহানগর উত্তর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক শাহ আলম রাজা, সদস্যসচিব কামরুল জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক লায়ন ফরিদ আহমেদ, ডেমরা থানা বিএনপি নেতা সেলিম রেজা, মো. আনিসুজ্জামানসহ অনেকে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এত বড় শোডাউন দেশনায়ক তারেক রহমানের বক্তব্য সরকারসহ জাতির কাছে কাছে একটা মেসেজ গেছে। দিসবটি উপলক্ষে ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা ও মহানগরে ১০ দিনের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। বিএনপি নেতারা জানান, হাইকমান্ড থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলা এখনো রয়ে গেছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় গ্রেপ্তারের ভয় না থাকলেও মামলা নিয়েই চলতে হচ্ছে। মামলা প্রত্যাহার নিয়েও সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। তাই এই ইস্যুতেও জোরালো কথাবার্তা বলা হবে কর্মসূচি থেকে। বিএনপি নেতারা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর প্রথম ভাষণে সরকারের লক্ষ্য নির্ধারণ করে বলেছিলেন, প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা হবে। তবে গত তিন মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সমমনা দলগুলো একই দাবিতে বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে সমানতালে কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি নির্বাচনি রূপরেখা প্রত্যাশা করছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে আছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁকে আমরা সবাই সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। তাঁর ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করে দেশের মানুষকে আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার। আমরা আশা করব, তিনি নির্বাচনের একটা পরিবেশ তৈরি করবেন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের শাসনকে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবেন।’