দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন সহ নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার সাথে জড়িত প্রিন্সিপাল সহ অনেক শিক্ষক।
জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবী ভুক্তভোগী ছাত্র জনতার .
বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ এর নাম পরিবর্তন করে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ নামকরণ করা হয়। গত ১৫ বছরের স্বৈর শাসনামলে দলবাজ প্রিন্সিপাল- ভাইস প্রিন্সিপাল এবং দলকানা কিছু শিক্ষক এর অনৈতিক প্রভাব বলয় এর কারণে এই মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ভঙ্গুর অবস্থায় নিপতিত হয়। আর এই প্রভাব বলয়টি তৈরি হয়েছিল সরাসরি হুইপ ইকবালুর রহিমের তত্ত্বাবধানে। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার চাইতে “ভাই (ইকবালুর রহিম)”এর প্রতি মনোযোগ ছিল অনেক বেশি- পাস ও হতো এভাবেই। ভিন্ন মতাবলম্বী ছাত্রদের উপর বারে বারে নির্যাতন চললেও দলকানা প্রশাসনের নীরব ভূমিকার কারণে এগুলোর পুরনাবৃত্তি ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। সুবিধাভোগী এসব শিক্ষকদের দাপটের কাছে সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ছিল অসহায়। রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের একজন শিক্ষক দক্ষতার সাথে বিভাগটি পরিচালনা করলেও প্রশাসন কর্তৃক লাঞ্ছিত হতে হয়েছে তাঁকে, এমন ঘটনা রয়েছে আরও অনেক।
বিগত প্রিন্সিপাল ডা. মোমেনুল হক (অবসরপ্রাপ্ত), তৎকালীন এবং সদ্য বদলীকৃত ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. সৈয়দ নাদির হোসেন ও মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (অপসারিত) ডা. নুরুজ্জামান এর দলবাজ মানসিকতা ও অসহযোগিতা, এমন কি সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ডা. এ এফ এম নুরুল্লাহ এর নীরবতা ও উদাসীনতার কারণে মেডিসিনের বিভিন্ন শাখা যেমন নিউরোমেডিসিন, নেফ্রোলজি, গাস্ট্রোএন্টারোলজি এবং কার্ডিওলজি বিভাগ সুষ্ঠুভাবে এবং সময়মত বিকশিত হতে পারেনি। বিভিন্ন সময়ে রেসপিরেটরি মেডিসিন এর অধ্যাপক, সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক পদায়িত হলেও এই হাসপাতালে কোন রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ নাই। আউটডোরে এমডি (রেসপিরেটরি মেডিসিন) ডিগ্রিধারী একজন সিনিয়র মেডিকেল অফিসার (ডা. আতিক) আছেন। এমডি রেসপিরেটরি মেডিসিন এর একজন সহযোগী অধ্যাপক এর পদে সংযুক্ত একজন সহকারী অধ্যাপক (ডা. নূর মোহাম্মদ) আছেন।
কিন্তু এই চিকিৎসক কলেজ প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কে অনৈতিকভাবে প্রভাবিত করে কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে পদায়িত হয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিজেকে সহযোগী অধ্যাপক (কার্ডিওলজি) হিসেবে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত করে মেডিকেল কলেজ এবং তাঁর প্রাইভেট প্র্যাকটিস এর ক্ষেত্রে অনৈতিক সুবিধা ভোগ করছেন এবং রোগীদেরকে প্রতারিত করছেন। অথচ কার্ডিওলজি বিভাগের বেশিরভাগ শিক্ষক (সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপক) ওএসডি হয়ে আছেন। শুধু তাই নয় দলবাজ প্রশাসনের ছত্র ছায়ায় তিনি রেসপিরেটরি মেডিসিন এর সহকারী অধ্যাপক হওয়া সত্বেও কার্ডিওলজি বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এর ফিট লিস্টে নাম তুলেছেন; এমনকি বিএসএমএমইউ এর ডিপ্লোমা কার্ডিওলজি পরীক্ষাতেও পরীক্ষক হিসেবে একাধিকবার নিয়োগ পেয়েছেন। এভাবেই রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ জন্মলগ্ন থেকে অদ্যাবধি এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আলোর মুখ দেখেনি। এই বিভাগের ক্রয়কৃত যন্ত্রপাতিও এভাবেই নষ্ট হয়েছে; সুবিধাবঞ্চিত হয়েছে সাধারণ মানুষ। এছাড়াও অনিয়মিত উপস্থিতির কারণে অনেক বিভাগেই রয়েছে প্রত্যাশিত সেবা প্রাপ্তির বড্ড অভাব। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও সহকারি পরিচালকদের আন্তরিকতার অভাব স্পষ্ট। পর্যবেক্ষক মহলের মতে জনগণের কল্যাণার্থে এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। উল্লেখ্য- ছাত্র আন্দলোনের মুখে অধ্যাপক ডা. সৈয়দ নাদির হোসেন, ডা. নুরুজ্জামান ও ডা. কান্তা রায় রিমিকে আজীবনের জন্য ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ও তাঁদের অন্যত্র বদলীর জন্য সুপারিশের প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি তাঁদেরকে অনত্র বদলী করা হয়েছে ।
বিগত ২৯/০৮/২০০২৪ ইং তারিখে একাডেমিক কাউন্সিলের একটি জরুরী বর্ধিত সভা যার স্মারক নং ৫৯.১৪.০০০০.১৩৭.০০.১০৩.২০২৪- ১৬৬২/১(৭) তারিখ ৩১/০৮/২৪ ইং মোতাবেক একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয় । উল্লেখ্য, ঐ সভায় হত্যা চেষ্টা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং শিক্ষার্থী নির্যাতনে জড়িত থাকার অপরাধে বিভিন্ন ব্যাচের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ক্যাম্পাসকে সুষ্ঠু, নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব করার জন্য আলোচনা হয় । ঐ সভায় লিখিতভাবে মোট উনচল্লিশ(৩৯) জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় । তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে আমরা অভিযোগকারী, অভিযুক্ত এবং সাক্ষীদের বিস্তারিতভাবে সাক্ষাতকার গ্রহন শেষে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তে উপনীত হই
নিম্নলিখিত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা যায়নি ঃ সালমান ২৭ তম ব্যাচ, অপুর্ব ২৮ তম ব্যাচ, প্রিতম ২৮ তম ব্যাচ, জোবায়ের ২৮ তম ব্যাচ, শরীফ ২৮ তম ব্যাচ, তানভীর ২৮ তম ব্যাচ, অনিক ২৮ তম ব্যাচ, সাইদ আরাফাত ২৮ তম ব্যাচ, সিদ্দিক ২৯ তম ব্যাচ, অনিক ২৯ তম ব্যাচ, আসাদ ২৯ তম ব্যাচ, রিফাত ২৯ তম ব্যাচ, ইনাম ২৯ তম ব্যাচ, আরাফাত ২৯ তম ব্যাচ, আমীর ২৯ তম ব্যাচ, হৃদয় চন্দ্র শীল ৩০ তম ব্যাচ, দিহান ৩০ তম ব্যাচ, ফজলে রাব্বি ২৭ তম ব্যাচ, জীবন ২৬ তম ব্যাচ, সাদমান সাকিব ২৯ তম ব্যাচ = মোট বিশ(২০) জন । এই বিশ জনের ক্যাম্পাস ও হোস্টেলে অবাধ বিচরণ এবং নিয়মিত ক্লাস করার অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করা হল ।
নিম্নলিখিত উনিশ(১৯) জনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি ওভিযোগের গুরুত্ব বা মাত্রা অনুসারে নিম্নরূপ শাস্তির সুপারিশ করে ।
মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে ও হাসপাতালে আগামী ১০ বছর নিষিদ্ধ ও অবাঞ্চিত থাকবে ঃ জাকির ২৭ তম ব্যাচ, নয়ন ২৭ তম ব্যাচ,নাসিম ২৫ তম ব্যাচ
ইন্টার্ণী হোস্টেল থেকে আজীবন বহিষ্কার এবং হাসপাতাল হতে এক(১) বছরের জন্য বহিষ্কারাদেশ ঃ সাজেদুর রহমান জয় ২৭ তম ব্যাচ
বয়েজ হোস্টেল থেকে আজীবন বহিষ্কার এবং কলেজ থেকে এক(১) বছরের জন্য বহিষ্কারাদেশ ঃ সাইমন ২৭ তম ব্যাচ
বয়েজ হোস্টেল থেকে আজীবন বহিষ্কার এবং কলেজ থেকে ছয়(৬) মাসের জন্য বহিষ্কারাদেশ ঃশিবলী ২৭ তম ব্যাচ, আশিকুল ২৭ তম ব্যাচ, দিদার ২৮ তম ব্যাচ
ইন্টার্ণী হোস্টেল থেকে আজীবন বহিষ্কার এবং ছয় (৬)মাসের জন্য হাসপাতাল হতে বহিষ্কারাদেশ ঃনিঝুম ২৫ তম ব্যাচ, পিয়াস ২৫ তম ব্যাচ, রাকিব ২৬ তম ব্যাচ, সানাউল্ল্যাহ ২৮ তম ব্যাচ, ইয়াকুব ২৮ তম ব্যাচ, ফারহান ২৮ তম ব্যাচ
বয়েজ হোস্টেল থেকে আজীবন বহিষ্কার এবং কলেজ থেকে তিন(৩) মাসের জন্য বহিষ্কারাদেশ ঃ তুর্য্য ২৯ তম ব্যাচ, রিদওয়ান সাকিব ২৯ তম ব্যাচ, নাজমুল ৩০ তম ব্যাচ, নিবিড় ৩০ তম ব্যাচ
বয়েজ হোস্টেল থেকে আজীবন বহিষ্কারাদেশ ঃ জয় সাহা ২৯ তম ব্যাচ
তদন্ত কমিটি আরোও সুপারিশ করে যে, সাইমন ২৭ তম ব্যাচ একটি অপরাধে এক বছরের বহিষ্কারাদেশ এ আছে বিধায় তার শাস্তি এই শাস্তির সাথে একত্র করে দেয়া । যেসব শিক্ষার্থীর আগামী দুই(২)মাসের মধ্যে প্রফেশনাল পরীক্ষা রয়েছে তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে দেয়া এবং পাশ করলে তার পর থেকে শাস্তিকাল গণণা শুরু করা ।
ক্যাম্পাসকে সুষ্ঠু, নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব করার জন্য তদন্ত কমিটি নিম্নরূপ সুপারিশ করেন
ক্যাম্পাসকে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা
সম্পুর্ণ অরাজনৈতিক শিক্ষার্থী(নিরপেক্ষ)দের দ্বারা ছাত্র পরিষদ গঠন করা যারা শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় সবসময় সচেষ্ট থাকবে এবং যে কোন প্রয়োজনে কলেজ প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করবে
ক্যাম্পাসে সকল প্রকার র্যাগিং প্রতিরোধে শিক্ষার্থীরা ও প্রশাসন সবসময় সচেষ্ট থাকবে এবং র্যাগিং এর অপরাধে কেউ অভিযুক্ত হলে কলেজ প্রশাসন তাৎক্ষনিক শাস্তিমুলক ব্যাবস্থা নিবে ।
শিক্ষার্থীদের ও শিক্ষকগণের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠিত হবে ।
পুরো ক্যাম্পাস এবং হোস্টেল করিডোরগুলো সিসিটিভির আওতায় থাকবে ।
ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা যেন প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে কলেজ প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন ।
শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনযোগী করে তুলতে ও এক্সট্রাকারিকুলাম এক্টিভিটিগুলোতে অংশগ্রহন করতে উদ্ভদ্ধ করতে হবে ।
পুরো ক্যাম্পাস এবং হোস্টেল করিডোরগুলো সিসিটিভির আওতায় থাকবে ।
ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা যেন প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে কলেজ প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন ।
শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনযোগী করে তুলতে ও এক্সট্রাকারিকুলাম এক্টিভিটিগুলোতে অংশগ্রহন করতে উদ্ভদ্ধ করতে হবে ।