রাজনীতি

দুই আন্দোলন নিয়ে সতর্ক আওয়ামী লীগ

রাজপথে চলমান দুই আন্দোলন নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল থেকে রাজধানীর দুই মহানগরসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরের নেতাদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান দলটির শীর্ষ নেতারা। তারা মনে করছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল এবং সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ প্রত্যাহারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে বিরোধী দলগুলোর ইন্ধন থাকতে পারে। এসব আন্দোলন ঘিরে যাতে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য দলের সব স্তরের নেতাদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাদের সতর্কতার পাশাপাশি পাহারা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং পেনশন কর্মসূচি নিয়ে শিক্ষক আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও জোট। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে কিছুটা অস্বস্তি আছে। নীতিনির্ধারকদের মূল্যায়ন হচ্ছে, বিএনপিসহ বিরোধীরা যেকোনো আন্দোলনকে সরকারবিরোধী অবস্থানে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। অতীতে তা সফল হয়নি।

এবারো যাতে সফল না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চলমান আন্দোলন নিয়ে পরপর দুইদিন মন্তব্য করেছেন। গতকাল তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন পরিস্থিতি সরকার গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। শিক্ষার্থীরা যে ইস্যুতে আন্দোলন করছে, সেটা তো সরকারি সিদ্ধান্ত। আদালত ভিন্ন রায় দিয়েছেন। আমরা তো সিদ্ধান্ত দিইনি, দিয়েছেন আদালত। ওবায়দুল কাদের বলেন, সর্বজনীন পেনশনে প্রত্যয় কর্মসূচির বিরুদ্ধে সারা দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের সমাধান হয়ে যাবে। শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে কখন বসবো, এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। সময়মতো সমাধান হবে। নিজেরা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী ও শিক্ষকদের পেনশন আন্দোলনের ওপর ভর করেছে।
এদিকে গতকাল ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিভিন্ন স্তরের নেতারা পৃথক বৈঠক করেন। সেখানে চলমান আন্দোলন ও তাতে বিএনপি-জামায়াতের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বলা হয়, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা দুই ইস্যুতে চলা আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করছেন। দুই ইস্যু নিয়ে গতকাল যুব মহিলা লীগের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন। কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়, এটার বিরুদ্ধে এভাবে আন্দোলন করা, এটা তো সাব-জুডিস। কারণ, আমরা সরকারে থেকে কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারি না। কারণ, হাইকোর্ট রায় দিলে সেটা হাইকোর্ট থেকেই আবার আসতে হবে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রসঙ্গে বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম আমরা দিয়েছি, এটা সবার জন্য। এটা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল, ২০০৮ এর নির্বাচনী ইশতেহারে। যেটা আমরা করতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, শুধু সরকারি চাকরিজীবী তারাই পেনশন পায় বাকিরা বঞ্চিত থাকে। কাজেই কেউ যাতে বঞ্চিত না থাকে, সেজন্য এই পেনশন স্কিমে বিভিন্ন স্তর দিয়ে দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, এটা অরাজনৈতিক আন্দোলন হলেও সরকার ও আওয়ামী লীগ বিষয়টির ওপর দৃষ্টি রাখছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গণমাধ্যমকে বলেন, এগুলো নিয়ে উদ্বেলিত, উচ্ছ্বসিত, তির্যক ভাষায় কথা বলার কিছু নেই। একটি শ্রেণি ঘোলা জলে মাছ ধরার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা সব সময়ই করে। তবে এই সব আন্দোলন নিয়ে সেই সুযোগ পাবে না, এ ব্যাপারে সরকার, আওয়ামী লীগ সতর্ক আছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াজউদ্দিন রিয়াজ মানবজমিনকে বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এরইমধ্যে ঢাকার সব ওয়ার্ড ও ইউনিট নেতাদের পাহারা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোথাও বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করা হলে তা রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button