দেশজুড়ে

সাংবাদিক রানার সব অভিযোগ অবিলম্বে প্রত্যাহার দাবি সিপিজের, দায়মুক্তি দিয়ে সাংবাদিকদের হয়রানি করা যাবে না

সাংবাদিক মো. শফিউজ্জামান রানার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। বুধবার নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেয়া এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে উত্তরাঞ্চলীয় লালমনিরহাটের ৫ জন সাংবাদিককে হয়রানির তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে সিপিজে। এতে বলা হয়, ৫ই মার্চ গ্রেপ্তারের পর এক সপ্তাহ জেলে রাখা হয় রানাকে। তিনি দেশ রূপান্তর পত্রিকায় কাজ করেন। সরকার পরিচালিত উন্নয়নমূলক কর্মসূচি সম্পর্কে তথ্য চেয়ে তিনি একটি আবেদন করেছিলেন। এরপর শেরপুর জেলার স্থানীয় সরকারের এক অফিস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসব তথ্য পাওয়া গেছে খবর, বাংলাদেশি জার্নালিস্টস ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া, দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুনের তরফে। ওইদিনই পরে সহকারি ভূমি কমিশনার, যিনি একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও, তিনি তাকে সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ অমান্য করা এবং একজন নারীর মর্যাদাহানির অভিযোগে ৬ মাসের জেল দেন। তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হয় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে।

যেকোনো অপরাধের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত মোবাইল কোর্ট।
তথ্য ও সম্প্রচার বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলি আরাফাত বলেছেন, এ ঘটনার তদন্ত করবে তথ্য কমিশন। ১৮ই মার্চ সোমবারের মধ্যে কমিশনের তদন্ত রিপোর্টের একটি কপি পাওয়ার কথা তার। এই তদন্ত রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চেয়ে বার বার যোগাযোগ করে সিপিজে। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কোনো জবাব দেননি। মোস্তফা মামুন সিপিজেকে বলেছেন, বুধবার পর্যন্ত তিনিও ওই তদন্ত রিপোর্টের কোনো কপি পাননি।

আলাদাভাবে ১৪ই মার্চ স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার দিকে লালমনিরহাটের সহকারি ভূমি কমিশনারের অফিসে আটকে রাখা হয় মাই টিভি এবং দ্য ডেইলি অবজার্ভারের প্রতিনিধি মাহফুজ সাজুকে। সংবাদ মাধ্যম, বাংলাদেশি জার্নালিস্টস ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া এবং একজন সাংবাদিকের তথ্যমতে, সে সময় ওই অফিসে ভূমি নিয়ে বিরোধের শুনানি করছিলেন অননুমোদিত একজন কর্মকর্তা। সেই দৃশ্যের ভিডিও সাজু ধারণ করছিলেন। ২০ মিনিট পরে সাজুকে সাহায্য করতে লালমনিরহাট প্রেস ক্লাবের চারজন সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় তাদেরকেও সেখানে আটকে ফেলা হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন জেলার একজন রাজস্ব বিষয়ক কমিশনার। তারপর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।

সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানাকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা তদন্তে সরকারকে স্বাগত জানাচ্ছে সিপিজে। এ সংগঠনের এশিয়া প্রোগ্রাম সমন্বয়ক বেহ লিহ ই বলেন, শুধু তথ্য জানার কারণে সাংবাদিকদের প্রতিশোধের মুখোমুখি হওয়া উচিত নয়। লালমনিরহাটে সরকারি একটি অফিসে ৫ জন সংবাদকর্মীকে আটকে রাখার বিষয়েও কর্তৃপক্ষকে স্বচ্ছ তদন্ত করা উচিত। তাদেরকে আরও নিশ্চিত করতে হবে যে, দায়মুক্তি নিয়ে সাংবাদিকদের হয়রানি করা যাবে না।

সংশ্লিষ্ট অফিসের একজন সহকারি সাংবাদিক রানাকে তথ্য পাওয়ার অধিকারের পক্ষে আরটিআই আবেদনের প্রেক্ষিতে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানোকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার করা হয় রানাকে। রানাকে উদ্ধৃত করে মামুন বলেন, এরপর সমস্যা সমাধানে শেরপুরের ডেপুটি কমিশনার বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বান জানান। স্থানীয় সরকারের একজন প্রধান কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রানার সঙ্গে চিৎকার শুরু করেন। তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন- আপনি একজন দালাল সাংবাদিক।

এরপর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ওই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার দুটি মোবাইল ফোনই জব্দ করে। তাকে শেরপুর জেলা কারাগারে রাখা হয় এক সপ্তাহ। ১২ই মার্চ তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়। জেলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন রানা। এর শুনানি হওয়ার কথা আগামী ১৬ই এপ্রিল।
ওদিকে আলাদাভাবে সিপিজে’কে সাজু বলেছেন, ভূমি বিরোধ নিয়ে শুনানির ভিডিও ধারণ করার পর সহকারি ভূমি কমিশনারের অফিসের করিডোরে এ মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনজন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেন তিনি। তখন এক কর্মকর্তা তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালান। এরপর তিনি সহকারি ভূমি কমিশনারকে ডাকেন।

ততক্ষণে অফিসটির স্টাফরা সাক্ষাৎকার দেয়া ওই তিন ব্যক্তিকেও ঘিরে ধরে এবং ভবনটির গেটে অবরুদ্ধ করে ফেলে। সাংবাদিক সাজুকেও সেখানে অবরুদ্ধ করা হয়। তিনি বলেন, পরে স্থানীয় এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সহযোগিতায় ওই ভবনে প্রবেশ করেন চারজন সহযোগী সাংবাদিক। তাদেরকেও ভবনটিতে অবরুদ্ধ করা হয়। এই সাংবাদিকরা হলেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের মাজহারুল ইসলাম বিপু, দৈনিক কালবেলার প্রতিনিধি এসকে সাহেদ, এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি নিয়ন দুলাল ও দৈনিক নবচেতনার প্রতিনিধি লিয়াকত আলি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button