আবারও কাঁপল দেশ, ছোট কম্পন বাড়াচ্ছে শক্তি
দেড় মাসের মাথায় আবারও ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ। এবার উৎপত্তিস্থল সিলেটের গোলাপগঞ্জে। ভূমিকম্পপ্রবণ সিলেটে দেড়শো বছরে অন্তত তিনটি বড় ভূমিকম্প হয়েছে। সব মিলিয়ে দুই মাসে চারবার ভূমিকম্পে কেঁপেছে দেশ।
সর্বশেষ ৫ মে ঢাকাসহ এর আশপাশের এলাকায় ৪ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার দোহারে। বিশেষজ্ঞরা ছোট ছোট এসব ভূমিকম্পে বড় বিপর্যয়ের আভাস দেখতে পাচ্ছেন। তারা মনে করেন, ভূঅভ্যন্তরে শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে।
শুক্রবার সকাল ১০টা ৪৬ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনুভূত হয়। সীমান্তের ওপারে ভারতেও এ কম্পন অনুভূত হয়। ভূতাত্ত্বিক কারণে দেশে সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছে চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চল।
কারণ, ভূ-চ্যুতিগুলো এ চার অঞ্চলে সন্নিহিত। অতীতে যেসব বিধ্বংসী ভূমিকম্প বাংলাদেশকে আলোড়িত করেছে, সেগুলোর উৎপত্তিস্থলই ছিল সীমান্তবর্তী এসব প্লেট বাউন্ডারির চ্যুতি এবং দেশের ভেতরের ডাউকি ও মধুপুর চ্যুতি। এগুলোই ওই চার অঞ্চলের জন্য বেশি বিপজ্জনক।
এ চ্যুতিগুলো থেকে বিধ্বংসী ভূমিকম্প শিগগির হবে না ভেবে নিয়ে নিশ্চিন্তে বসে থাকার সুযোগ নেই। কারণ, চ্যুতিগুলোতে সৃষ্ট দুটি বিধ্বংসী ভূমিকম্পের মধ্যবর্তী যে কোনো সময়ে মাঝারি মাত্রার (রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রা পর্যন্ত) ভূমিকম্প হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সিলেট ও দোহারে ভূমিকম্পের আগে ৩০ এপ্রিল চট্টগ্রামে ৪ দশমিক ৬ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল পূর্ব মিয়ানমারের মাউলাইকে। ২৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় ৩ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। কেন্দ্র ছিল ভূগর্ভের প্রায় ১৭ কিলোমিটার নিচে।
২০২১ সালের ৭ জুন এবং ৩০ ও ২১ মে সিলেটে আটবার ভূকম্পন অনুভূত হয়। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচার জিওসায়েন্সে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূগর্ভে যে পরিমাণে শক্তি জমা হয়েছে, তাতে সিলেটে ৭ থেকে ৮ মাত্রার এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প যে কোনো সময় হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কয়েক বছরে সংঘটিত ভূমিকম্পের অন্তত ২০টির উৎপত্তিস্থল ছিল দেশের ভেতরে। এর মধ্যে ১১টি সিলেট অঞ্চলে। দুই বছরে সিলেটে অন্তত ১৬ বার ভূমিকম্প হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, “ঢাকা শহরে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ৭২ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হবে, দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা যাবে। বাংলাদেশকে ভূমিকম্প সহনীয় দেশ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার আছে সরকারের।”
তিনি আরও বলেন, “এরই মধ্যে আমরা ক্ষতি মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়িয়েছি। ফায়ার সার্ভিস ও সশস্ত্র বাহিনীকে অনেক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে। ফলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে সতর্ক হতে হবে। সিলেট ঘিরে আলাদা পরিকল্পনা নেওয়া হবে।”