ছাত্রাবাস থেকে রাবি ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, পাশে সুইসাইড নোট
বিনোদপুরের স্টুডেন্ট প্যালেস ছাত্রাবাস থেকে বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্র তানভীর ইসলামের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে সুইসাইড নোটও উদ্ধার করে পুলিশ।
তানভীর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি নীলফামারী জেলার সদর থানার কাঞ্চন পাড়ায়। বাবার নাম আবু বকর সিদ্দিক।
ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যা থেকে কক্ষে দরজা বন্ধ করে অবস্থান করছিলেন তানভীর। রাতে বাড়ি থেকে যোগাযোগ করতে না পেরে তার বাবা মেস মালিককে খোঁজ নিতে বলেন। তখন দরজায় কড়া নেড়ে সাড়া পাননি তিনি।
পরে জানালা দিয়ে দেখলে তাকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। মৃত্যুর আগে একটা চিরকুটও রেখে গেছেন তানভীর। চিরকুটে তিনি মানসিকভাবে তার হতাশার কথা জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, “আমরা দড়ি দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে পেয়েছি। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটা সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে। সুইসাইড নোটে স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করেছেন বলে লেখা রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে আমরা তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবো।”
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, “খবর পাওয়ার পরে ঘটনাস্থলে গেলে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। এখনো আমরা মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পারিনি। সঠিক কারণ জেনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত চিরকুটে লেখা রয়েছে, ‘স্বেচ্ছামৃত্যু’
প্রিয় বাবা-মা,
আপনাদের অনেক ভালোবাসি। জানি না কোথায় কমতি ছিল। আম্মুর জন্য বেশি খারাপ লাগতেছে। আমাদের ফ্যামিলিটায় আম্মুর অবদানটাই আমি বেশি মনে করি। কথাটা বলার অনেক কারণ সেগুলো হয়তো আব্বুও জানে। তোমাদের জন্য কিছুই করতে তো পারলামই না, উল্টো ফামিলিটাই শেষ করলাম। ছোট বোনটার কথা আর বললাম না। কান্না পাচ্ছে। দিনের পর দিন আপনাদের ঠকায় গেছি। এসব আপনারা জানতে পারলে হয়তো ভিতর থেকেই মরে যেতেন। সবসময় ভয়ে ভয়েই থাকতাম, গলা দিয়ে খাবার নামতো না। বেশি বাড়াবো না আর, যে হারায় সেই হারানোর যন্ত্রণাটা বুঝে, আর কেউ না। শেষ করলাম সবকিছু। এসব কিছু থেকে বাঁচার জন্যই এই সিদ্ধান্ত, আর কোনো উপায় ছিল না আমার কাছে। শেষ একাকিত্বই আমাকে গিলে খেল। মনের শক্তি ফুরিয়ে এলে দেহের শক্তি যতেই থাক, সম্ভব না বাঁচা। যদিও ক্ষমার যোগ্য না আমি, পারলে ক্ষমা করে দিয়েন। আপনাদের অযোগ্য সন্তান।