সেফ এক্সিট চাইলে নির্বাচনে আসুন: কাদের
সেফ এক্সিট চাইলে নির্বাচনে আসুন বলে বিএনপির উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শনিবার রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদ মিনার চত্বরে বিএনপির দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে তিনি একথা জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিদেশিরা আমাদের বন্ধু। তারা পরামর্শ দিতে পারে। ক্ষমতায় বসাতে পারে না। ক্ষমতায় বসাবে জনগণ। সেফ এক্সিট চাইলে নির্বাচনে আসুন।”
তিনি আরও বলেন, “তারেক রহমানের নির্দেশে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। বিএনপির আন্দোলনের ডাক আসে টেমস নদীর ওপার থেকে। যিনি আন্দোলনের নির্দেশ দেন, তিনি পলাতক ও দণ্ডিত আসামি। যিনি মুচলেকা দিয়ে বলে গেছেন, আর রাজনীতি করবেন না। এখন রাজনীতি করে কে?”
সেতুমন্ত্রী বলেন, “দণ্ডিত ব্যক্তির বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। আদালতের নিষেধ আছে, দণ্ডিত আসামি অনলাইনে বক্তৃতা করতে পারবেন না। কিন্তু তারেক রহমান দিনের পর দিন অনলাইনে কথা বলছেন। বিষয়টি নিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
তিনি আরও বলেন, “তারেক অপরাধ করে যাচ্ছেন। আর অপরাধের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চট্টগ্রামের আমীর খসরুর মাধ্যমে প্ল্যান আসে, টাকা আসে এবং অপকর্ম বাস্তবায়িত হয়। আসলে মির্জা ফখরুল এখনও বোঝেননি, সময় হলে বুঝবেন।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিএনপিতে গণতন্ত্র নেই। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার মেয়াদ দুইবার শেষ হয়েছে। তৃতীয়বার শুরু হয়েছে। এ সময়ে অর্থাৎ ১১ বছর মির্জা ফখরুল তার দলের সম্মেলন করেননি। বিএনপিতে গণতন্ত্র ও নির্বাচন নেই। স্বঘোষিত মহাসচিব দায়িত্ব পালন করছেন। লন্ডন থেকে পর্দা নাচায়। আর মির্জা ফখরুল এখানে নাচেন।”
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, “বিএনপির কথা অনুযায়ী তো সরকারের ক্ষমতায় থাকার কথা নয়, পালিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু কে পালিয়েছে? দেশ থেকে একমাত্র পালিয়ে গেছেন তারেক রহমান। আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ার দল নয়। আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের সঙ্গে আছে। ক্ষমতায় থাকলেও জনগণের সঙ্গে আছে, না থাকলেও আছে।”
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের জন্য অব্যাহতভাবে কাজ করছেন। বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করেছেন। এসবে বিএনপির অবিরাম অন্তর্জ্বালা। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, তিনি ও তার পরিবার বহুদিন ধরে শেখ হাসিনাকে অনুকরণ ও অনুসরণ করছেন। অথচ পল্টনে বিএনপি নেতা আমীর খসরু বললেন, লন্ডনে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নাকি শেখ হাসিনার বৈঠক হয়নি। বৈঠক না হলে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কীভাবে এলো?”
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, “ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন আর মির্জা ফখরুলদের কপালে জুটবে কিনা, জানি না। তাদের বলব, মিথ্যাচার পরিহার করে জনগণের কল্যাণে কাজ করুন। শেখ হাসিনা বিএনপির মতো কারও কাছে নালিশ করতে বিদেশ যাননি। তিনি দেশের জন্য দেশের মানুষের জীবন-মান উন্নয়নের জন্য সফল বিদেশ সফর করেছেন। আর বিএনপি নেতাদের লজ্জা-শরম নেই বলেই সকালে মুখ না ধুয়েই আমেরিকার দূতাবাসে নালিশ করার জন্য হাজির হন।”
শান্তি সমাবেশ চলাকালে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দলের মহানগরের থানা ও ওয়ার্ড কমিটি কেন দেওয়া হচ্ছে না, সে বিষয়ে জানতে চান। এ সময় মহানগর নেতারা কমিটি দিতে সাত দিনের সময় চান। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।
যুবলীগের শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ বলেন, “বিএনপি জানে, নির্বাচনে গেলে তারা জিততে পারবে না। জনগণের ওপর তাদের ভরসা নেই। এই কারণে ক্ষমতায় যেতে তারা জনগণের কাছে না গিয়ে বিদেশি প্রভুদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। নির্বাচনে না গিয়ে নির্বাচন বানচাল করে সরকারকে হটাতে চাইছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপিকে বলব, জনপ্রিয়তা থাকলে নির্বাচনে এসে প্রমাণ করুন, জনগণ আপনাদের মতো দুর্নীতিবাজ ও জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের চায়, নাকি শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা রক্ষা চায়। জনগণ দুর্নীতিবাজ, জঙ্গি ও অগ্নিসন্ত্রাসীদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এজন্য বিএনপির পাশে নেই জনগণ। জনগণ তাদের সঙ্গে থাকলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে থাকতে হতো না। তাদের নেতাকর্মীরা আন্দোলন-সংগ্রাম করে তাঁকে ছাড়িয়ে নিতেন।”
চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে শনিবারও শান্তি সমাবেশের মাধ্যমে রাজধানীতে শোডাউন করেছে ক্ষমতাসীন দল। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবলীগ শান্তি সমাবেশ করে। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে শান্তি সমাবেশ দুটি কার্যত বিশাল গণসমাবেশে পরিণত হয়।
যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।