‘হাতে হাতে এখন মোবাইল, কে দিয়েছে?’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন, কে দিয়েছে? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এই মোবাইল ফোন দিয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ওয়াইফাই পৌঁছে গেছে। এসবই ডিজিটাল বাংলাদেশ। ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠের জনসভায় তিনি এ কথা বলেন। শনিবার ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এ জনসভার আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মিথ্যা বলা, দুর্নীতি ও লুটপাট করা বিএনপি নেতাদের অভ্যাস। দলটির কোনো একজন নেতা আছেন, সারাদিন মাইক লাগিয়ে বসে থাকেন। বাংলাদেশকে নাকি আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। ময়মনসিংহে একযোগে ১০৩টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন কি বাংলাদেশ ধ্বংসের নমুনা?”
তিনি আরও বলেন, “সরকার ভূমিহীনদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছে। যাদের ঘরবাড়ি ও মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, রাস্তার পাশে পড়ে থাকে– তাদেরও ঘরবাড়ি বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ, আগামী দিনে দেশে একজন মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। এরই মধ্যে ৩৫ লাখ মানুষকে ঘর করে দেওয়া হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যে আরও ৪০ লাখ মানুষ ঘর পাবে।”
সরকারপ্রধান বলেন, “বিএনপির আমলে ৪১ শতাংশ মানুষ দরিদ্র ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। ১৯৯৬ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ৪৫ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকার বিনা পয়সায় বই দেওয়া থেকে শুরু করে উপবৃত্তি ও বৃত্তি দেওয়ায় সাক্ষরতার হার ৬৫ শতাংশে উন্নীত করেছিল। পরে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় গিয়ে সাক্ষরতার হার কমিয়ে আগের জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল।”
শেখ হাসিনা বলেন, “এর কারণও আছে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া নাকি ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। পাস করেছিলেন শুধু অঙ্ক আর উর্দুতে। উর্দু পাকিস্তানের ভাষা। এটা তার প্রিয় ভাষা। টাকা গোণায় অঙ্ক লাগে। তাই তিনি ওই দুটো ভালো বোঝেন। আর জিয়াউর রহমান ছিলেন ম্যাট্রিক পাস। তাদের ছেলে বিভিন্ন স্কুলে কয়েকবার এক্সপেল হয়ে কোনো এক অখ্যাত জায়গা থেকে নাকি সার্টিফিকেট জোগাড় করেছে।”
তিনি আরও বলেন,“তারা বোমা মারা, গ্রেনেড হামলা, লুটপাট, মানি লন্ডারিং, টাকা চুরি, দুর্নীতি ও এতিমের অর্থ আত্মসাতে এক্সপার্ট। বাংলাদেশের মানুষ লেখাপড়া শিখবে, উন্নত হবে– সেটা তারা চায় না। তারা ২০০১ সালে লুটপাট, সন্ত্রাস, বোমা হামলা, বাংলাভাই ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে বাংলাদেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করে আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছিল; মানুষ হত্যা করেছিল। তাদের অত্যাচারে মানুষ ছিল অতিষ্ঠ।”
প্রধানমন্ত্রী দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে জনসভাস্থলে পৌঁছান। সকাল ১০টা থেকেই জনসভাস্থলে মানুষ আসতে থাকে। দুপুর ২টার আগেই কানায় কানায় ভরে যায় পুরো এলাকা। ওই সময় জনসভাস্থল রূপ নেয় জনসমুদ্রে।
জনসভা মঞ্চে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমানের সঞ্চালনায় প্রায় ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ সমাপ্ত ৭৩টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং প্রায় ২ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
জনসভা মঞ্চে এসে পৌঁছালে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটু, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরিফ আহমেদ ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ফুল ও নৌকা প্রতীকের রেপ্লিকা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর হাতে। জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও গারো ওয়ানগালা নৃত্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় জনসভার আনুষ্ঠানিকতা।
জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “মানুষ বিএনপিকে চায় না। ধানের শীষের আরেক নাম পেটের বিষ, সাপের বিষ। মানুষ ভালো আছে। কিন্তু ফখরুল সাহেবরা ভালো থাকতে দেবে না। মানুষ খুশি থাকলে বিএনপি বেজার। মানুষ খুশি হলে ভোট কমে যায় বলেই বিএনপি খুশি নয়। তারা এতদিন দৌড়াতে দৌড়াতে এখন দাঁড়িয়ে গেছে। মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে গেছে। পথ হারিয়ে পদযাত্রার পথিক মানববন্ধনে দিশেহারা পথিক।”
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্তর সঞ্চালনায় জনসভায় আরও বক্তব্য দেন সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল প্রমুখ।