বাংলাদেশ

লাইট জ্বলে না ১৬ বছর, তবু বিল সাড়ে ৩ কোটি টাকা

প্রায় ১৬ বছর ধরে বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে রাতের খেলায় ফ্লাড লাইটগুলো জ্বলছে না। এই সময়ের মধ্যে ডে-নাইট কোনো খেলাও হয়নি। কোনো প্রয়োজনেও ফ্লাড লাইট জ্বালানো হয়নি। অথচ বিদ্যুৎ খাতে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করতে হয়েছে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক খেলা না থাকলেও ১৬ বছরে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা গুণতে হয়েছে। এই বিল পরিশোধ করতে হয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে। কোনো কোনো মাসে জরিমানাসহ প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা বিলও দিতে হয়েছে। বিষয়টি স্টেডিয়ামের কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড থেকে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে সংযোগ নেওয়া হয়েছে। স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বিশেষ লাইন নেওয়ার কারণে এখানে প্রতি মাসে সর্বনিম্ন বিল পরিশোধ করতে হয় অন্তত ৯০ হাজার থেকে লাখ টাকার ওপরে। কয়েক বছরে স্টেডিয়ামে গড়ে বিদ্যুৎ বিল এসেছে ১ লাখ ১০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ১৬ বছরে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামকে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার ওপর বিল পরিশোধ করতে হয়েছে।

স্টেডিয়াম সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ২১ কোটি টাকায় বগুড়া স্টেডিয়ামটি ফ্লাড লাইটসহ অন্যান্য উন্নয়ন করা হয়। ২০০৬ সালের ৩০ জানুয়ারি চান্দু স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে ঘোষণা করে আইসিসি। একই বছরে স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক টেস্ট ভেন্যুর স্বীকৃতিও পায়।

কিন্তু ২০০৬ সালের পর থেকে এ মাঠে আন্তর্জাতিক খেলা হয়নি। তবে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় লিগ, স্থানীয় প্রিমিয়ার লিগ, প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ ও করপোরেট লিগ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব ম্যাচের সবগুলোই দিনের আলোয় হয়। কর্মকর্তারা জানান, দিনে খেলার জন্য এই মাঠের ফ্লাড লাইট জ্বালোনোর কোনো প্রয়োজন নেই।

স্টেডিয়ামের চারটি টাওয়ারে ১০০টি করে মোট ৪০০ লাইট রয়েছে। এই লাইলটগুলো ৮ লাখ ওয়াট বিদ্যুতের আলো সরবরাহ করতে পারে। আন্তর্জাতিক খেলা বন্ধের পর কোনো লাইট নষ্ট রয়েছে কিনা, তাও বলতে পারেনি স্টেডিয়ামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। দূর থেকে দেখা যায়, লাইটের সুইচ বক্সগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। ফ্লাড লাইটের সংযোগ তারও চুরি হয়েছে কয়েকবার।

স্টেডিয়ামটির টাওয়ারে অনেক লাইটই নেই। সংযোগ তারও নেই। সুইচগুলোও নষ্ট। ১৬ বছরের মধ্যে একবারেও লাইটটি জ্বলেছে কিনা, তা দেখা হয়নি। ফ্লাড লাইটের বাল্বগুলো ঠিক আছে কিনা, সেটাও কেউ জানাতে পারেনি।

স্টেডিয়ামের বিদায়ি ভেন্যু ম্যানেজার জামিলুর রহমান জামিল বলেন, “স্টেডিয়ামে ফ্লাড লাইট সংযোগ থাকার জন্য বিলের পরিমাণ বেশি হয়। ফ্লাড লাইটের কিলোওয়াট অনেক বেশি, সেজন্য বিদ্যুৎ বিভাগের ডিমান্ড চার্জও বেশি। না জ্বালালেও মিনিমাম বিল দিতে হয়। প্রতি মাসে গড়ে সোয়া লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “যে লাইট জ্বলেই না, সেটি ভালো আছে না খারাপ তা কীভাবে বলা যাবে!”

জনমত ডেস্ক

নিউজ পোর্টাল, ঢাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button