‘দশ দফা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সংলাপ নয়’
দশ দফা দাবি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো সংলাপ নয় বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন বিএনপি সমর্থিত খুলনা বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিরা। সোমবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার মতবিনিময় সভায় তারা এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবার মতামত শোনেন। মতবিনিময় সভায় ১৭১ জনপ্রতিনিধি অংশ নেন। যার মধ্যে ২৫ জন বক্তব্য রাখেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে পাঁচ নেতা বক্তব্য দেন।
খুলনা বিভাগের জনপ্রতিনিধিরা বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের কোনো ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। শুধু তাই নয়, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের সংলাপে অংশগ্রহণ করা যাবে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুজ্জামান খান শিমুল প্রমুখ।
জানা গেছে, খুলনা বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা চলমান আন্দোলনের প্রতি গুরুত্ব দেন। সরকার বিরোধী চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে তারা মতামত দেন। এ সময় তারা বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পরে আন্দোলনের কোনো ফলাফল হাতে না পেয়ে মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া হয়। আবার ২০১৮ সালে দাবি দাওয়া আদায় ছাড়াই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ করে সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এসবই ছিল সরকারের ফাঁদে পা দেওয়া এবং হঠকারী সিদ্ধান্ত। এবার এ রকম কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। এবার কোনো অবস্থায় সরকারের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আগস্ট থেকে দেশের গণতন্ত্র, ভোটাধিকার আর বেঁচে থাকার অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা আন্দোলন করছি। এই সফল আন্দোলনে এরই মধ্যে সারাদেশে ১৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে। হাজার-হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে, কারাগারে নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আপনারা যারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের সঙ্গে জনগণের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আপনারা জনগণের চিন্তা-চেতনা উপলব্ধি করতে পারেন। দেশকে বাঁচানোর জন্য, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিএনপির ১০ দফা দাবি ও রাষ্ট্র সংস্কারে ২৭ দফা রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত আন্দোলনে সবাইকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে।”
মতবিনিময় সভায় জনপ্রতিনিধিদের একটি বড় অংশ এক দফার আন্দোলন দ্রুত শুরু করার পক্ষে মতামত দেন। দলের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এবারের পরিবেশ ভিন্ন। তাদের ন্যায্য দাবির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আগে ইতিবাচক সাড়া না মিললে এবং দাবি পূরণের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের সংলাপে তারা বসবেন না। এটা দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রংপুর বিভাগের সাবেক ও বর্তমান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে ধারাবাহিক এই সভা শুরু হয়। ১০ সাংগঠনিক বিভাগের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে হবে এই সভা। সোমবার খুলনা বিভাগীয় দুই জেলা ও সিলেট বিভাগের সাবেক ও বর্তমান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে বিএনপি।