বাংলাদেশ

দেড়শো আসনে ইভিএমে ভোট হচ্ছে না

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নতুন ২ লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গৃহীত প্রকল্প আপাতত স্থগিত করেছে সরকার।

নতুন প্রকল্পের অধীন ইভিএম ক্রয় করে ১৫০ আসনে ভোটের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ফলে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বৃহৎ পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা থেকে পিছু হটতে বাধ্য হলো কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন।

ইভিএম প্রকল্পটিতে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান অর্থসংকটে আর সায় দিচ্ছে না সরকার। প্রকল্পটি আপাতত প্রক্রিয়াকরণ হচ্ছে না বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রোববার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে ইভিএম না কেনার বিষয়ে সরকারের অবস্থানের কথা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেওয়া হয়। ইসি সচিবালয় এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা কমিশনের সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশনের কাছে সোমবার তা উপস্থাপন করেন।

সোমবার বেলা দেড়টার দিকে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন ইসি সচিব। গণমাধ্যমের কাছে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, “নির্বাচন কমিশনের সদয় সিদ্ধান্তের আলোকে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থিত হয়েছি। ইসি ইতিমধ্যে ইভিএম-সংক্রান্ত প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের পাঠানো হয়। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন কিছু তথ্য সংযোজন করতে বলে।”

তিনি আরও বলেন, “পরবর্তী সময়ে ইসির সিদ্ধান্তের আলোকে পরিকল্পনা কমিশনে তা পাঠানো হয়। আর্থিক সংকটে ইভিএম প্রকল্প এবার হচ্ছে না, ইসিকে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়ে দেয়। রোববার প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন থেকে চিঠিও পেয়েছি। ইভিএমের প্রকল্পটি বিস্তারিত পরীক্ষানিরীক্ষা ও পর্যালোচনান্তে এবং বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সরকারের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় আপতত প্রক্রিয়াকরণ না করার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ মুহূর্তে প্রকল্পটির কার্যক্রম তারা প্রক্রিয়াজাতকরণ করছে না। বাতিল হচ্ছে না, তবে এ মুহূর্তে হচ্ছে না।”

ইসি সচিব বলেন, “কমিশন বলেছিল, নতুন মেশিন পেলে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট হবে। নতুন ইভিএম না পেলে ২০১৮ সালের ইভিএম দিয়ে যত আসনে সম্ভব ইভিএমে ভোট হবে। সে সিদ্ধান্ত বহাল আছে। কমিশনের হাতে অন্তত দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে। তা পরীক্ষানিরীক্ষা করে ব্যবহারযোগ্য ইভিএম দিয়ে ৫০-৭০ আসনেও ইভিএমে ভোট হতে পারে।”

ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন গত বছরের ২৩ আগস্ট ১৫০ আসনে ভোটের সিদ্ধান্ত নেয়। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে ‘ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারার’ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়ার এক দিনের মাথায় সংসদ নির্বাচনে অর্ধেক আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ইসি।

১৯ সেপ্টেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার লক্ষ্যে ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন করে ইসি। ইসির প্রকল্প পাশের এক মাস পর ১৯ অক্টোবর প্রায় ২ লাখ ইভিএম কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়ের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তুত করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। এক দফা ফেরত আসার পর সংস্কার করে পুনরায়ও পাঠানো হয় প্রস্তাব।

অগ্রগতি না দেখে নভেম্বরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছিলেন, “মধ্য জানুয়ারি মাসের মধ্যে নতুন ইভিএম ক্রয়ের সিদ্ধান্ত অনুমোদন না হলে ১৫০ আসনে ভোট করা কঠিন হয়ে যাবে।” সবশেষ বৃহস্পতিবার এ নির্বাচন কমিশনার জানান, সব কিছু মিলিয়েই আমরা বলেছিলাম, মধ্য জানুয়ারির মধ্যে না হলে আমাদের পক্ষে ১৫০ আসনে করা সম্ভব না। কথাটি বলেছি সর্বোচ্চ। আমাদের হাতে যে ইভিএম আছে তা নিয়ে ৭০-৮০টি করতে পারব।

বুধবার পশ্চিমা কূটনীতিকরা সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেন। তাতেও ইভিএমের প্রসঙ্গটি উঠে আসে। তখন সিইসি বলেছিলেন, তাদের জানানো হয়েছে, ইভিএম নিয়ে যে অবিশ্বাস ছিল, তা অনেকটা কেটে গিয়েছিল। তবে এটাও জানিয়েছি যে ইভিএম নিয়ে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছি না, কারণ আদৌ ইভিএম এভেইলেবল হবে কি না? আমরা কী পরিমাণ নির্বাচন ইভিএমে করতে পারব—সে বিষয়ে কোনো নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আমরা উপনীত হইনি।

জনমত ডেস্ক

নিউজ পোর্টাল, ঢাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button